ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার আশুলিয়ায় আশা এনজিও'র কিস্তির টাকা আদায় করতে গিয়ে সিনিয়র লোন অফিসার সাবিনা ইয়াসমিনকে খুনের ঘটনায় করা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া একজনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নাসরিন জাহান এ রায় দেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- মোসা. রাজিয়া খাতুন ও মো. আশরাফুল ইসলাম মানিক। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। এছাড়াও দণ্ডবিধির ২০১ ধারার অপরাধের জন্য তাদের প্রত্যেককে সাত বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো পাঁচ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। অন্য আসামি মো. মোসলেম মিয়াকে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় সাত বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো পাঁচ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় প্রত্যেকেই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
এদিন রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জে এম ফরিদুর রহমান বলেন, রায়ে তিনজন আসামির দণ্ড হয়েছে। এতে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না। বাকি আসামিদেরও সাজা হওয়া উচিত ছিল।
এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অন্য আট আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- মোসা. নার্গিস, মো. বিজয় আহমেদ পাপ্পু, মো. জুয়েল রানা, মো. শাকিল, মো. মনির হোসেন, মো. আসলাম, মো. আকাশ, মো. সুজন। আসামিদের মধ্যে মো. আকাশ মামলার শুরু থেকেই পলাতক ছিলেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, আসামি আশরাফুল ইসলাম মানিক ও মোসলেম আশা সমিতি হতে কিস্তি নিয়ে নিয়মিত পরিশোধ করতে পারেন নি। এজন্য তাদের নিকট আশুলিয়া থানাধীন বিকেএসপি ব্রাঞ্চ শাখার সিনিয়র লোন অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন কিস্তি চাইতে যান। এ বিষয়ে আগেই আসামিরা সাবিনাকে হত্যা পরিকল্পনা করে। একইসঙ্গে তার কাছে থাকা সমিতির বিভিন্ন সদস্যদের আদায়কৃত টাকা ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে।
২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর দুপুর দেড়টার দিকে আশা কর্মী সাবিনা ঢাকার আশুলিয়ার কবিরপুর দেওয়ানপাড়ায় কিস্তি আনতে গেলে আসামি মোসলেম, তার স্ত্রী রাজিয়া, আশরাফুল ইসলাম মানিক এবং তার স্ত্রী নার্গিস ভিকটিমকে বাসার ভিতরে কৌশলে টেনে নিয়ে যায় এবং তারা সবাই মিলে ভিকটিমকে শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করে।
এ ঘটনার দুইদিন পর ১৬ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন আশা এনজিও'র বিকেএসপি শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আব্দুল মজিদ। মামলাটি তদন্ত শেষে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. আশরাফুল আলম। পরের বছরের ২৬ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন আদালত। পরবর্তী বছরের ২৩ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ৬ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।