রূপগঞ্জে ওয়াসার কাজে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার প্ল্যান্ট প্রকল্পের অধীনে নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পূর্ববর্তী সরকার মেঘনা নদীর পানি শোধনের উদ্যোগ নেয়।
প্রকল্প অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ঢাকা ওয়াসার।
প্রকল্পটি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ফ্রেন্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এএফডি), ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫,৬০০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুর এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ছয় বছর পার হয়ে গেলেও প্রকল্পটি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
এর মধ্যে প্রকল্পের দেশীয় সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের পাওনা বেতন বকেয়া রেখে প্রকল্প থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুয়েজ-ভেউলিয়া।
অভিযোগ উঠেছে, ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং সাবেক এমডি তাসকিম এ খানের যোগসাজশে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।
পাওনা টাকা আদায় এবং শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে শুক্রবার রূপগঞ্জে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা।
দেশীয় সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরিডড-এর প্রকল্প কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ জানান, ২০২০ সালে ২৮ মাসের জন্য ২৪০ কোটি টাকার চুক্তিতে মেঘনা নদীর বিশনন্দি থেকে গন্ধর্বপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এলাকায় পানির পাইপলাইন স্থাপন ও রাস্তা মেরামতের কাজ দেওয়া হয় তাদের। প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ করার পরও, প্রতিষ্ঠানটি তাদের ৮০ কোটি টাকা বকেয়া রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানান, গত জুন মাস থেকেই তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। সুয়েজ-ভেউলিয়া প্রতিষ্ঠানটি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ শেষ করিয়ে ৮০ শতাংশ বিল উত্তোলন করলেও পাওনা পরিশোধ করেনি।
এরিডডসহ ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, লুট হওয়া অর্থসহ প্রকল্পের ঋণের অর্থ বাংলাদেশকে সুদসহ ফেরত দিতে হবে।
ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক ওয়াহিদ মুরাদ জানিয়েছেন, তিনি এসব বিষয়ে অবগত নন। তবে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধের আলটিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায়, ওয়াসা ভবনের সামনে আমরণ অনশন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
ওয়াসার একটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং সাবেক এমডি তাসকিম এ খানের নেতৃত্বে প্রকল্পের নামে বিভিন্ন অজুহাতে বাজেট বৃদ্ধি করা হয়। ৫৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি নকশা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে প্রায় ৮১৫১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় প্রকল্পের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।