কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন রেলওয়ের স্টাফরা, বন্ধ হতে পারে সারা দেশে ট্রেন চলাচল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৬ এএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা প্রদান নিয়ে অসন্তোষের কারণে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। এতে করে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে দেশব্যাপী ট্রেন চলাচল বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রানিং স্টাফদের দাবি নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। মন্ত্রণালয় বলছে, তারা রানিং স্টাফদের দাবির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, একজন রানিং স্টাফের (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে কাজ শেষে তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত স্থানে (হেডকোয়ার্টার) ফিরে আসলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকায় বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রয়োজনে রেলওয়ের স্বার্থে তাদের অতিরিক্ত কাজ করতে হলে ‘মাইলেজ’ নামে অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করার প্রস্তাব দেয়। এতে বলা হয়, আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাতিল করে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করা হবে। এছাড়া, বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে ভাতা যোগ করা হবে না। এই প্রস্তাবের পরই রানিং স্টাফরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে রানিং স্টাফরা আন্দোলন করছেন। বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।
এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাইলে, সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় জানায় যে রেলওয়ে এস্টাবলিশমেন্ট কোড অনুযায়ী রানিং অ্যালাউন্স প্রাপ্য হবেন, তবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা প্রাপ্য হবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্স মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই মত জানার পর রানিং স্টাফরা আরও ফুঁসে ওঠেন। তারা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে যদি টাকাই না দেয়, তাহলে আমরা কাজ করব কেন?
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি জানিয়েছে, অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার কারণে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয় আপত্তি জানায়।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা রানিং স্টাফদের সমস্যার সমাধান করতে না পারায়, রানিং স্টাফরা ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং তারা আন্দোলনে না যান, সেটা চাইছেন।