পাটলাই নদীতে নৌজটের পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারসাজি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৪ এএম

ছবি : সংগৃহীত
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী পাটলাই নদীতে দীর্ঘদিন ধরে নৌজটের দুর্ভোগ চলছেই। ভারতের পাহাড়ি ঢলে নদীর তলদেশ পলিতে ভরাট হওয়ায় কয়লা ও পাথর পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ এ নদীপথে প্রতিবছর শত শত নৌযান আটকা পড়ে। এতে নৌ শ্রমিকদের মানবেতর দিন কাটাতে হয়, খাবার ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে যান তারা।
প্রতিবছরই ভেকু দিয়ে সাময়িকভাবে খনন কাজ চালানো হলেও বর্ষার সময় সেই মাটি আবার নদীতে ফিরে আসে, ফলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না। অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ইচ্ছাকৃতভাবে নদীতে বালু ও মাটি ফেলে নৌজট সৃষ্টি করছে।
নৌজট নিরসনে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প নিতে গেলেও বাধার মুখে পড়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির সদ্য বিদায়ী সহকারী পরিচালক সুব্রত সাহা জানান, গত বছর সুলেমানপুর এলাকায় আড়াই কিলোমিটার নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হলে সাবেক ও বর্তমান দুই ইউপি সদস্য, সিরাজ ও এমদাদ মেম্বার এর বাধা দেন। তারা মানববন্ধন করে প্রতিবাদও করেন।
তিনি আরও বলেন, "এখানে নৌজট লেগে থাকলে কিছু লোকের সুবিধা হয়। তারা প্রতি নৌকা থেকে ১০-২০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়। এজন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু জায়গায় মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে নৌযান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়।"
অভিযুক্ত দুই সহোদর সিরাজ ও এমদাদ মেম্বার স্বীকার করেছেন, তারা ড্রেজিংয়ে বাধা দিয়েছেন। তবে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে তারা দাবি করেন, "পাটলাই নদী নয়, এটি একটি খাল। এখানে ড্রেজিং করলে হাওর নষ্ট হবে ও ফসল রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই বাধা দিয়েছি।" তারা আরও জানান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল কর ও যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমানও এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন।
তাহিরপুরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমাও স্বীকার করেছেন, "প্রতিবছর নৌজট নিরসনে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিলেও স্থানীয়দের বাধায় সেই কাজ করা সম্ভব হয়নি।"
বিআইডব্লিউটিএর সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, "নৌজট নিরসনে আমরা লংভুম ভেকু দিয়ে খনন চালিয়ে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। পর্যায়ক্রমে সুনামগঞ্জের অন্যান্য নদীগুলোতেও খনন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাময়িক ভেকু খননের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নদীর তলদেশ থেকে উত্তোলিত মাটি দূরে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা না করলে এই সংকট কাটবে না। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের বাধা দূর না হলে সমস্যার সমাধান অসম্ভব হয়ে পড়বে।