গাছ থেকে ঝড়ে পড়েছে আম, আকারেও হয়েছে ছোট। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরারহাটের বাগানে দেখা গেল প্রচুর ঝরে পড়া আম। ছবি সংগৃহীত
অনাবৃষ্টি ও তীব্র দাবদাহে রংপুরে হাঁড়িভাঙ্গা আমে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম, আকারও হয়েছে ছোট। কাঙ্ক্ষিত ফলন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। কৃষকরা গাছে স্প্রে করাসহ সেচ দিয়ে ঝরে পড়া ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এদিকে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আমের ফলন নিয়ে শঙ্কা নেই বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা রয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এবার হেক্টর প্রতি গড় ফলন হবে ১৫ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। সম্ভাব্য উৎপাদন হবে ২৯ হাজার ৭৭২ মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙ্গা আম। গত বছরের মতো এবারও হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছে অনেক মুকুল এসেছিল। কীটনাশক স্প্রে, সার ও সেচ প্রয়োগ করে মুকুল টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন আমচাষিরা। এ বছর রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। বৈশাখ মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়েছে মুকুল ও গুটি। এ ছাড়া অনেক বাগানে সেচের অভাবে গুটিগুলো বড় হয়নি। ফলে পরিপক্ব মৌসুমে এবার ছোট আকারে আম বেশি পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছে কৃষকরা।
মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরারহাট, খোড়াগাছ, মাঠের হাট, বদরগঞ্জের শ্যামপুর, রংপুর সদরের পালিচড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু, মিষ্টি, আঁশহীন হাঁড়িভাঙ্গা আম। রাস্তার দু’ধারে আম যেন পথচারীদের আমের রাজধানীতে স্বাগত জানাচ্ছে। ধানের চেয়ে কম পরিশ্রমে লাভ বেশি হওয়ায় গত এক দশক ধরে এসব এলাকায় কৃষকরা আম চাষে ঝুঁকেছেন। তাই প্রতি বছর এসব এলাকায় আমের বাগান বাড়ছে। শুধু বাগানেই নয়, বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে, রাস্তার দু’ধারে, জমির আইলে কলম গাছে ঝুলছে হাঁড়িভাঙ্গা আম।
আখিরাহাটে ২৫ একরে হাঁড়িভাঙ্গা আমবাগান রয়েছে আরিফিন ইসলামের। এর মধ্যে ৪ একর নিজের এবং বাকি ২১ একরের বাগান লিজ নিয়েছেন। তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলে আছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। তবে গত বছরের তুলনায় কম। দাবদাহে গাছগুলো থেকে পড়ে যাচ্ছে আম।
আরিফিন ইসলাম বলেন, এ বছর গরমের কারণে মুকুল ঝরে গেছে। বাগানে আমের তিন ভাগের এক ভাগই নাই । গরমের কারণে আরও ঝরে যাচ্ছে। আমরা আম রক্ষায় গাছে পানি স্প্রেসহ গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিচ্ছি। এ ছাড়া প্রয়োজ মাফিক কীটনাশক, ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে। এ বছর আমের কম উৎপাদন হবে, তাই দাম বেশি থাকবে।
একই এলাকার কৃষক আকমল হোসেন বলেন, ‘গরমে মুকুল ঝরি পড়ি যাওয়াতে আমের ফলন কম হইচে। এইবার দানাও ছোট ছোট সাইজের হইচে। আশা করতোছি বাজারে আমের ভালো দাম থাকপে।’
কৃষক আবজার রহমান বলেন, গতবার আম পাড়ার সমায় ৮০০ থ্যাকি মণ শুরু হইছিল। শেষ পর্যন্ত আড়াই হাজারোত গিয়া ঠেকচে। এইবার কম করি হইলেও শুরুতে ১৫শ টাকা মণ থাকপে।
হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখা আব্দুস সালাম সরকার বলেন, জুনের শেষ সপ্তাহের দিকে বাজারে হাঁড়িভাঙ্গা আম আসবে। এর আগে যেন পরিপক্ব আম বাজারে না আসে সেদিকে প্রশাসনের নজর দিতে হবে। যদি কেউ বাজারে অপরিপক্ব আম বিক্রি করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ অপরিপক্ব আম ভোক্তা পর্যায়ে চলে গেলে এ সুমিষ্ট আমটি সম্পর্কে ভোক্তাদের একটি খারাপ ধারণা তৈরি হতে পারে। এ নিয়ে এলাকার হাঁড়িভাঙ্গা আমচাষিরা সচেতন রয়েছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গাছে থাকা হাঁড়িভাঙ্গা আম পরিচর্যার জন্য আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তারা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেচ দিচ্ছে। প্রয়োজনে অনেক কৃষক সন্ধ্যায় সেচ দিচ্ছে, গাছে পানি স্প্রে করছে। খরায় আমের ফলনে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।