Logo
Logo
×

অর্থনীতি

আমলাদের সহযোগিতায় মাফিয়া কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে বিএটি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম

আমলাদের সহযোগিতায় মাফিয়া কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে বিএটি

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশে শুধু তামাক ব্যবসাই করছে না, বরং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আমলাদের সহযোগিতায় একটি সুসংগঠিত কর জালিয়াতির নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। কোম্পানিটি বছরের পর বছর ধরে কৌশলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই বহুজাতিক কোম্পানি বর্তমানে বাংলাদেশের তামাক শিল্পের ৬৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তামাক খাতে প্রদত্ত মোট করের ৮০ শতাংশ পরিশোধ করে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ কর পরিশোধের আড়ালেই চলছে ভয়াবহ আর্থিক জালিয়াতি। ২০১৬ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিএটি প্রায় ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকারও বেশি মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দিয়েছে।

এই কর ফাঁকির পেছনে রয়েছে সরকারের এক শ্রেণির প্রভাবশালী কর্মকর্তা। সরকারের ৮ শতাংশ শেয়ার থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির কর জালিয়াতি ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএটির দুর্নীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালক, অর্থ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ আমলারা জড়িত। এদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিএটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা ভোগ করে আসছে।

তামাকজনিত কারণে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ সরাসরি এবং ১৩ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে তামাকজনিত রোগে মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা ভয়াবহ, যেখানে প্রতিবছর ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ ধূমপানের কারণে এবং ২৫ হাজার মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায়।

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ তামাক সেবন করে, যার মধ্যে ৬১ শতাংশ পুরুষ এবং ১৮ শতাংশ নারী। এত বিপজ্জনক পরিসংখ্যানের পরও বিএটি প্রতিনিয়ত তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছে এবং জনগণকে তামাক সেবনে আকৃষ্ট করতে নানা প্রচারণা চালাচ্ছে।

বিএটির অধীনে থাকা প্রায় ১০টি জনপ্রিয় সিগারেট ব্র্যান্ড নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও প্রতিটি প্যাকেটে সরকার অনুমোদিত মূল্য ছাপানো থাকে, তবুও ডিস্ট্রিবিউটররা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে।

এই অবৈধ মুনাফার অন্যতম প্রধান সহযোগী হলো জামিল এন্ড কোম্পানি, যারা ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে পার শলাকা সিগারেটে ১ টাকা করেও অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কৌশলের মাধ্যমে বিএটি এবং এর ডিস্ট্রিবিউটররা জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য ধ্বংস, কর ফাঁকি ও আর্থিক জালিয়াতির মাধ্যমে বিএটি এখন একটি তামাক মাফিয়া কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন