Logo
Logo
×

জাতীয়

এসএসসিতে দুই বিষয়ে ফেল করলেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম

এসএসসিতে দুই বিষয়ে ফেল করলেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ

এসএসসি পরীক্ষায় এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলেও শর্ত সাপেক্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। ছবি : সংগৃহীত

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী যদি দশম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ কর্মদিবসে উপস্থিত না থাকে, তাহলে সে পাবলিক মূল্যায়ন বা এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে না। আর কোনো শিক্ষার্থী যদি এসএসসি পরীক্ষায় এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে তাকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বিষয়ে পাস করতে হবে। আর তিন বা তার বেশি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না।

বর্তমানে মূলত দশম শ্রেণিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) উত্তীর্ণ হলে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে নির্বাচনী পরীক্ষা হবে না। যেসব শিক্ষার্থী নবম শ্রেণি শেষ করে দশম শ্রেণিতে উঠবে, তারাই এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামোর সর্বশেষ শেষ প্রস্তাবে এমন তথ্য রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এনসিটিবি বলছে, তাঁরা আশা করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় মূল্যায়নের বিষয়টি তাড়াতাড়ি অনুমোদন হবে।


সাত স্তরে ফল বা রিপোর্ট কার্ড

বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই প্রথমবারের মতো নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬ সালে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে এর পরের বছর থেকে সামষ্টিক মূল্যায়নের (বার্ষিক পরীক্ষা) মতো ডিসেম্বরেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, সে রকম ভাবনাও চলছে। নতুন শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো পরীক্ষা হবে না। এসএসসি পরীক্ষার ফলও জিপিএর (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) ভিত্তিতে হবে না। নির্ধারিত পারদর্শিতা (নৈপুণ্য) অনুযায়ী সাতটি স্কেল বা স্তরে ফল বা রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হবে। এই সাত স্তরের হবে অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা বা নৈপুণ্য (পারফরম্যান্স) অনুযায়ী এ স্তরগুলো নির্ধারণ হবে। যেমন সর্বোচ্চ স্কেল ‘অনন্য’ বলতে বোঝানো হবে শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পারদর্শিতার চূড়ান্ত স্তর অর্জন করেছে। রিপোর্ট কার্ডে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের ফলাফল আলাদাভাবে সাতটি স্তরে হবে। সাতটি স্তরের জন্য থাকবে সাতটি ছক।

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, মূল্যায়নের সর্বশেষ প্রস্তাব হলো কোনো শিক্ষার্থী যদি দশম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ কর্মদিবসে উপস্থিত না থাকে, তাহলে সে পাবলিক পরীক্ষা বা মূল্যায়নের জন্য বিবেচিত হবে না। তবে জরুরি বা বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উপস্থিত হার ৭০ শতাংশের কম হলেও সব বিষয় শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থীকে পাবলিক মূল্যায়নে অংশগ্রহণের জন্য বিবেচনা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তার জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ এবং তার স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ থাকতে হবে।


লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৬৫ শতাংশ, কার্যক্রমভিত্তিকে ৩৫

এ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত আছে, তাতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হতে যাচ্ছে ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ ৩৫ শতাংশ। মোট ৫ ঘণ্টায় হবে এসএসসি পরীক্ষা। কার্যক্রমভিত্তিক (অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি) বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে হবে লিখিত অংশের মূল্যায়ন।


উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণ যেভাবে

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ প্রস্তাব অনুযায়ী, একেকটি বিষয়ে কয়েকটি পারদর্শিতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। কোনো বিষয়ে একের বেশি পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ‘প্রারম্ভিক’ স্তরে থাকলে শিক্ষার্থী ওই বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না। আর যদি কোনো বিষয়ে দুইয়ের বেশি (তিন বা তার ততধিক) পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ‘বিকশমান’ বা তার নিচের স্তরে থাকে তাহলেও সে বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী যদি তিন বা তার বেশি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়, তাহলে পরবর্তী শ্রেণিতে (একাদশ শ্রেণি) উত্তীর্ণ হবে না। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে শর্ত সাপেক্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অনুত্তীর্ণ হওয়া বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, শর্ত সাপেক্ষে উচ্চমাধ্যমিকে ওঠা কোনো শিক্ষার্থী যদি নির্ধারিত দুই বছরের মধ্যে অনুত্তীর্ণ হওয়া বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে না পারে, তাহলে সে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে না। কিন্তু এরপরও তার সুযোগ থাকবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে অনুত্তীর্ণ হওয়া বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে।

এই শর্ত শিখনকালীন ও সামষ্টিক উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া উত্তীর্ণ বা শর্ত সাপেক্ষে উত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থী মান উন্নয়নের জন্য এক বা একাধিক বা সব বিষয়ে পুনরায় পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। একজন নিবন্ধিত শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়নের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পরবর্তী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে রিপোর্ট কার্ড বা পারদর্শিতার সনদ গ্রহণ করতে পারবে।

উল্লেখ, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন)। আর কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, অর্থাৎ পরীক্ষার ভিত্তিতে।

গত বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন এ শিক্ষাক্রম শুরু হয়। আর চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও চালু হয়েছে এ শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন কেমন করে হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত করতে পারছে না শিক্ষা বিভাগ। এ নিয়ে একের পর এক আলোচনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, মূল্যায়নের বিষয়টি এনসিটিবি পর্যায়ে ঠিক করা হয়েছে। এখন এনসিসিসির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি) সভায় তা অনুমোদন হলেই সেটি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন