দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হলে তা বিশ্বে ভুল বার্তা পৌঁছাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অবিলম্বে সম্পূর্ণ আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান দেশের নাগরিকদের প্রতি। পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের পরিবারের সম্পত্তির ওপর বা অন্য কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দেয়ার অনুরোধ করেছেন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেছেন, যারা সম্পত্তির ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন, তাদের ক্ষোভ বোধগম্য। তারা এবং তাদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা হাসিনার শাসনামলে বছরের পর বছর অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তাদের ক্ষোভের অনুভূতি বোঝে সরকার। এমনকি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার সময়ও হাসিনা তার সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই বাস্তবতা বোঝার পরও সরকার সকল নাগরিককে আহ্বান জানাচ্ছে, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিশ্বকে দেখাক যে আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে আইনের শাসন বজায় থাকবে। 

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাটাই নতুন বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য। আমরা একসঙ্গে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই যা অতীতের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে ভিন্ন। দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করা উচিত নয়। আইন না মানার যেকোনো প্রচেষ্টা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকিস্বরূপ হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা জুলাই ও আগস্টে হাসিনার শাসন উৎখাত করে দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বিশ্বব্যাপী বন্ধুদের কাছে প্রমাণ করতে পারি যে— আমরা একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নাগরিক ও মানবাধিকারকে সম্মান জানাই। একটি ন্যায়সঙ্গত নতুন বাংলাদেশের পক্ষের সংগ্রামীদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা বর্তমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণকে আগের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ তৈরি করে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এ বিষয়ে সচেতন। সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সব বাংলাদেশির জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। কেউ যদি দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য উসকানিমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

ড. ইউনূস বলেন, ফ্যাসিবাদী নেতারা দেশকে চরম দুর্দশার মধ্যে ফেলে গেছেন। যতদিন আমরা সজাগ থাকব এবং নৈতিক উচ্চতা ধরে রাখব, ততদিন তারা ফিরে আসার সুযোগ পাবে না। তাদের সম্পত্তির ওপর হামলা চালালে তারা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের সুযোগ পাবে এবং তাদের সাজানো গল্প ছড়ানোর চেষ্টা করবে। আমরা তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের আওতায় আনছি। সারাবিশ্ব আমাদের সঙ্গে আছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে বিশ্বে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।

দেশের সব নাগরিককে আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যেন এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে সব বাংলাদেশি নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারে। এজন্য আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে। ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ উদ্যোগে নিজেদের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।