বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সংস্থাটির পরিচালক হাফিজুল ইসলাম আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং বর্তমানে দেশের বাইরে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত আছেন। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন।
আবেদনে আরও বলা হয়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করতে হলে আদালতের অনুমোদন দরকার। শুনানি শেষে আদালত এই অনুমোদন দেন।
অবৈধ সম্পদ ও মামলা
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করে। মামলাগুলোর মূল অভিযোগ— তারা ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল জাতীয় এক দৈনিকে প্রকাশিত দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি চাকরিজীবী হয়েও তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল দুদক অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তদন্তে উঠে আসে, বেনজীর ও তার পরিবারের নামে রয়েছে— ৬৯৭ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বিও হিসাব।
পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে এসব সম্পত্তি জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়।
তদন্ত শুরু হওয়ার পর, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই বেনজীর আহমেদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশত্যাগ করেন। দুদক তাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করলেও তিনি হাজির হননি। ২ জুলাই দুদক থেকে তার ও পরিবারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। আগস্টের মাঝামাঝি তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে তার পরিবারের চার সদস্যের সম্পদের বিবরণী জমা দেন।
এর আগেও আদালত একাধিকবার তার ৩৪৫ বিঘা জমি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার এবং গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ নির্দেশ দেন।
মোট ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে এবং এসব সম্পত্তি দেখভালের জন্য রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে তিনি পলাতক অবস্থায় রয়েছেন এবং ইন্টারপোলের সহযোগিতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।