ক্ষমতার ছায়ায় গড়ে ওঠা তারিক সিদ্দিকের সম্পদের সাম্রাজ্য

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

সাবেক মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক | ছবি : সংগৃহীত
সাবেক মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, যিনি এক সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে তার বিপুল সম্পদের মালিকানা। অভিযোগ রয়েছে, বিগত দেড় দশকে তিনি সমরাস্ত্র, ব্যাংক-বীমা, পোশাক শিল্প, আবাসন, এভিয়েশন, শেয়ারবাজার, জ্বালানি খাতসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন। এসব খাতে সংশ্লিষ্টদের জিম্মি করে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন। একসময় দেশের সামরিক বাহিনীর বদলি-পদোন্নতি থেকে শিল্প ও বাণিজ্য খাত পর্যন্ত তার ছিল দাপুটে প্রভাব। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নিজের নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঢাকার পূর্বাচলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন। শুধু পূর্বাচল ও রূপগঞ্জ এলাকাতেই তার নামে-বেনামে শতাধিক বিঘা জমি, প্লট ও রিসোর্টের সন্ধান মিলেছে।
পূর্বাচলে জমি ও প্লট
পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কের কাছে বাড়িয়াছনি মৌজায় তারিক সিদ্দিকের পাঁচটি প্লট রয়েছে। এছাড়া রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিং, গোপালেরঠুঠা গ্রামে ১৫০ শতাংশের একটি মাছের ঘের রয়েছে। রূপগঞ্জ দাউদপুর ইউনিয়নের বিরহাটাব গ্রামে মাদ্রাসার পাশে আরও ৮০ শতাংশ জমির মালিকানা রয়েছে তার।
পূর্বাচলের জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পে তার ও তার স্ত্রীর নামে অন্তত ৪১টি প্লট রয়েছে, যা হাউজিং প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে ছড়িয়ে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্লট কেনা হয়েছে প্রভাব খাটিয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে জোর করে চড়া দামে বিক্রির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক শুধু পূর্বাচল নয়, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন। ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুর, চান্দনা ও বাঙ্গালগাছসহ বিভিন্ন এলাকায় জমি ক্রয় করেন, যেখানে বাগানবাড়ি, পুকুর এবং প্রাসাদসম আকর্ষণীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
ঢাকার মিরপুর, ধানমন্ডি, ক্যান্টনমেন্ট ও বারিধারায় তার স্ত্রীর নামে ১৩টি ফ্ল্যাটসহ একাধিক সম্পত্তি রয়েছে। সাভার ডিওএইচএস ও গুলশান-মহাখালীতে জমি ও বাণিজ্যিক ভবনের মালিকানার তথ্যও পাওয়া গেছে।
এছাড়া, তারিক সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যরা কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ, রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকায় জমি কিনেছেন। গাজীপুরের সারা রিসোর্ট এবং রূপগঞ্জের নিঝুম পল্লী রিসোর্টেও তার শেয়ার রয়েছে।
বিদেশে সম্পদ
তার মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নামে ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১৯.২৫ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি বাড়ি কেনা হয়েছে। বড় মেয়ে নুরীন তাসমিয়া সিদ্দিকের নামেও লন্ডনের পার্শ্ববর্তী টাউনে একটি বাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।
অর্থনৈতিক অনিয়মের তদন্ত
সরকার তারিক সিদ্দিক ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে সরকারি জমি আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিংসহ নানা অভিযোগ তদন্ত করছে। এছাড়া, তিনটি বিমানবন্দরে প্রকল্প সংক্রান্ত দুর্নীতিতে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন বা বার্তার কোনো উত্তর দেননি।
শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের নামেও সম্পদ
তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মেজর শরিফের নামে রূপগঞ্জ ও পূর্বাচলে শত শত প্লট কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনীতে তার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে, যারা বিভিন্ন জায়গায় তার হয়ে জমি কিনতেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মোল্লা জানিয়েছেন, তারিক সিদ্দিকের চাপে পড়ে তিনি রূপগঞ্জ এলাকায় জমি কিনতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, “২০১৮ সালে আমাকে র্যাব দিয়ে তুলে নেওয়া হয়। আয়নাঘরে ১০ দিন নির্যাতনের পর জীবন বাঁচাতে তাকে জমি কিনে দিতে হয়েছে।”
তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করেছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা এই অভিযোগগুলো তদন্তের দাবি তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি পদে থাকার সুবাদে তারিক সিদ্দিক যে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।