Logo
Logo
×

মতামত

শীতে কেন বেড়ে যায় ওজন

Icon

যুগেরচিন্তা২৪ ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম

শীতে কেন বেড়ে যায় ওজন

শীতকাল মানেই হালকা ঠাণ্ডার আবেশে মোড়ানো দিন আর মনকাড়া মুখরোচক খাবারের হাতছানি। কিন্তু সেই সঙ্গে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা যেন অবধারিত। এই সময়ে শরীর চর্চার অনীহা এবং অতিরিক্ত আহারের কারণে শীত শেষে অনেকেই মেদবহুল শরীর নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব। আসুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কেন শীতে ওজন বাড়ে এবং তা প্রতিরোধের উপায়।

শীতে ওজন বাড়ার কারণ

শীতকালে ওজন বাড়া শুধু খাদ্যাভ্যাসের ফল নয়, বরং এটি পরিবেশগত, শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের সমন্বয়ে ঘটে।

১. শরীর চর্চার ঘাটতি

ঠাণ্ডার প্রকোপে ঘরের বাইরে সময় কাটানোর প্রবণতা কমে যায়। জগিং, সাইক্লিং কিংবা সাধারণ হাঁটাচলার মতো কার্যক্রমও স্থগিত থাকে। পেশীগুলোর কম সক্রিয়তার কারণে বিপাকীয় কার্যক্রম মন্থর হয়ে যায়, যা ক্যালোরি পুড়ানোর হার কমিয়ে দেয়।

২. অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ

শীতের সময়ে গরম ও পুষ্টিকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন মিষ্টি আলু, পিঠা বা মাংসের আইটেম বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করলে তা দেহে মেদ জমার কারণ হয়।

৩. সূর্যের আলো কম পাওয়া

শীতকালে দিনের আলো কমে যাওয়ায় শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়। এটি শুধু হাড় নয়, মেজাজ ও বিপাক প্রক্রিয়ার ওপরও প্রভাব ফেলে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে হতাশা ও অলসতার প্রবণতা দেখা যায়, যা অতিরিক্ত আহারের কারণ হতে পারে।

৪. মানসিক চাপ ও ইমোশনাল ইটিং

শীতের একঘেয়ে পরিবেশ এবং কাজের চাপের কারণে অনেকেই মানসিক চাপ অনুভব করেন। মানসিক চাপ সামাল দিতে বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়।

৫. বিপাকীয় হারের পরিবর্তন

ঠাণ্ডার সঙ্গে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ধরে রাখতে বিপাক হার সামান্য বাড়লেও অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে তা কার্যকর থাকে না। অনেকের ক্ষেত্রে শরীর এমনকি হাইবারনেশন মুডে প্রবেশ করতে পারে, যা শক্তি ব্যয় কমিয়ে দেয়।

শীতকালে ওজন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায়

ওজন নিয়ন্ত্রণে শীতকালকে বাধা হিসেবে না দেখে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এ সময় কিছু ছোট পরিবর্তন এনে স্বাস্থ্যবান থাকা সম্ভব।

১. ঘরে থাকার সময় শরীর চর্চায় মনোযোগ দিন

ঠাণ্ডার কারণে বাইরে না যেতে চাইলে ঘরের মধ্যেই সহজ ব্যায়াম শুরু করা যায়। হালকা যোগব্যায়াম, পুশ-আপ বা স্কোয়াটের মতো কার্যক্রম আপনাকে শরীর সচল রাখতে সাহায্য করবে।

২. খাদ্যতালিকায় প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত করুন

শীতের সময়ে শালগম, মিষ্টি আলু, পালং শাক, এবং গাজরের মতো সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, মাছ, ডিম, এবং দই রাখলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে।

৩. পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ

সূর্যালোক থেকে সরাসরি ভিটামিন ডি সংগ্রহ করতে পারলে তা শরীর ও মনের জন্য উপকারী। শীতের সকালে কিছু সময় রোদে কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৪. পানি পানের অভ্যাস বজায় রাখুন

শীতকালে পানি পান কমে যায়, যা কখনো কখনো ক্ষুধার উদ্রেক করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং ভেষজ চা পান করে শরীর উষ্ণ রাখুন।

৫. মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা

মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান করুন, পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটান। এছাড়া সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ আপনাকে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন

রাতে পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের হরমোন ব্যালান্স বজায় রাখে, যা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমায়। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

পরিশেষে

শীতের সময় ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে তা সম্ভব। খাদ্যাভ্যাস ও শরীর চর্চার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য আনতে পারলে শীতকালও স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য আদর্শ সময় হতে পারে। স্থুলতা এড়িয়ে সক্রিয় ও সুস্থ থাকতে দৃঢ় মনোভাব ও নিয়মিত অভ্যাস ধরে রাখুন। শীতের আমেজ উপভোগ করুন, তবে স্বাস্থ্যবান থাকার কথা ভুলবেন না!

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন