
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর, যেখানে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দূষণের ফলে বসবাস ক্রমশ দুঃসহ হয়ে উঠেছে। এর ওপর যত্রতত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়ে ওঠা নতুন করে চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণ এবং পরিকল্পনাহীন অনুমোদনের ফলে ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে, যা নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পূর্ববর্তী সরকারগুলো মালিকপক্ষকে সুবিধা দেওয়ায় উচ্চশিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়নি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুসারে, ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা ২ কোটি ৪৬ লাখের বেশি। ইআইইউ গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪-এর সমীক্ষায় ঢাকা বিশ্বের বসবাসের সবচেয়ে অনুপযুক্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম, এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত কিয়েভের চেয়েও নিচে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫৩টি পাবলিক ও ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকাতেই ১৭টি পাবলিক ও ৬৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যা দেশের মোট ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার চাহিদার তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম, যা শিক্ষার্থীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্ভরশীল করে তুলছে। কিন্তু ঢাকায় এত বেশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রয়োজন থাকলেও যেখানে-সেখানে নিম্নমানের শিক্ষা প্রদান ও সার্টিফিকেট বাণিজ্য গ্রহণযোগ্য নয়। আইনের কঠোর প্রয়োগ ও নিয়মিত মনিটরিং প্রয়োজন।’’
২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, মিলনায়তন, এবং অন্তত ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া করা ক্যাম্পাস থাকা বাধ্যতামূলক। তবে ঢাকার অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এই শর্ত মানছে না।
নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘‘ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের বদলে আরও কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ছিল বিভাগীয় ও জেলা শহরে যাওয়া। কিন্তু মালিকপক্ষ ঢাকাতেই থাকতে চায়, যার ফলে নগরীতে আরও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।’’
ইউজিসির সাবেক সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন মনে করেন, ‘‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়নে নজর দিতে হবে। ঢাকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারকে পরিকল্পিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
বর্তমানে কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক, যা নগর-পরিকল্পনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ঢাকাকে বসবাসযোগ্য রাখতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের পরিকল্পনা বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। সরকার যদি কার্যকর নীতি প্রণয়ন করে এবং কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করে, তাহলে ঢাকা নগরীর ওপর চাপ কমবে এবং সুষম উন্নয়ন সম্ভব হবে।