ভারতে বন্যায় নিহত ৩৮, পানিবন্দি সাড়ে ছয় লাখ মানুষ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
ভারতে বন্যায় নিহত ৩৮, পানিবন্দি সাড়ে ছয় লাখ মানুষ
ভারী বৃষ্টিতে আসামে চলমান বন্যায় তলিয়ে গেছে ভারতের উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চল। বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আসাম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি জানিয়েছে এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করছে রাজ্য। বন্যার কারণে রাজ্যটির ১৯ জেলার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আসাম রাজ্য সরকার সূত্র বলছে, টানা বৃষ্টির কারণে বিপত্সীমা ছুঁয়ে ফেলেছে ব্রহ্মপুত্র, বুড়িডিহিং, সুবনসিরি, ধানসিঁড়ি, জিয়া ভরালি, পুথিমারি, বেকি, গুরুং, সঙ্কোশসহ বিভিন্ন নদী। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের বিস্তীর্ণ অংশ এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে।
আসামের বিশ্বনাথ, কাছাড়া, চড়াইদেহ, দারং, চিরাং, ধেমাজি, ডিব্রুগড়, গোলাঘাটা, জোরহাট, কামরূপ, লখিমপুর, শিবসাগর, সোনিতপুর, মরিগাঁও, নগাঁও, মাজুলি, করিমগঞ্জ, তামুলপুর, তিনসুকিয়া, নলবাড়ি জেলার অবস্থা শোচনীয়। রাজ্য সরকারের দুর্যোগ মোকাবেলা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে বন্যাপ্লাবিত জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে আট হাজার ১৪২ জন মানুষ। আরো ৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে বলে জানিয়েছে দপ্তর। বন্যার কারণে গণ্ডার, বুনো মহিষ, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কাও বাড়ছে।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের বহু এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনায় একদিনে অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি এক বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
আসাম রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানান, ১৬ জুন থেকে এখানে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ১৯ জেলার ছয় লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং আট হাজারেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সোমবার রাজ্যটিতে অন্তত দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বে এক শিংওয়ালা গণ্ডারের বৃহত্তম বাসস্থান আসামের কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানও বন্যায় ডুবে গেছে। এই বনে প্রায় ২২০০টি গণ্ডারের বাস, এটি বিশ্বব্যাপী এ প্রজাতির মোট সংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ। কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের ২৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্লাবিত হয়েছে। এ বনের চারটি হরিণ ডুবে মারা গেছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এবং টানা বৃষ্টির ফলে বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আসামের প্রতিবেশী রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের রজধানী ইটানগরে অবিরাম বর্ষণের কারণে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামী তিন দিন ওই অঞ্চলে আরো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে দেশটির পশ্চিম, উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে তারা।