পাকিস্তানে সিক্রেট কিলিং মিশন চালাচ্ছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা : ওয়াশিংটন পোস্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) পাকিস্তানে গোপনে কিলিং মিশন বা গুপ্তহত্যা অভিযান চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানে পরিচালিত এই গুপ্তহত্যা অভিযানের ধরণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর আমেরিকায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সংঘটিত গুপ্তহত্যার ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিল রয়েছে।
‘ইন ইন্ডিয়া’স শ্যাডো ওয়ার উইথ পাকিস্তান, আ ক্যাম্পেইন অব কাভার্ট কিলিংস’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে শত্রুর মোকাবিলায় নিজেকে অগ্রণী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সেই লক্ষ্যে তার নেতৃত্বে ভারত পাকিস্তানের সাথে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা দেশটিতে গুপ্তহত্যা মিশন চালাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ২০২১ সালের পর পাকিস্তানে সংঘটিত ছয়টি গুপ্তহত্যার ঘটনা তারা তদন্ত করেছে। পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তা, সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার এবং পাকিস্তানি তদন্তকারীদের সংগ্রহ করা পুলিশি নথি ও অন্যান্য প্রমাণ পর্যালোচনা করেছে।
এসব তথ্য-উপাত্তে পাকিস্তানে ভারতের গুপ্তহত্যার মিশনের রূপরেখা সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর আমেরিকায় সংঘটিত গুপ্তহত্যার মিশনের সঙ্গে এসব গুপ্তহত্যার বেশ মিল রয়েছে।
প্রতিবেদনে আমির সরফরাজ তাম্বা নামে এক পাকিস্তানিকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই শত্রুভাবাপন্ন দেশের মধ্যে চলমান ছায়াযুদ্ধের সর্বশেষ ও উল্লেখযোগ্য উদাহরণ আমির সরফরাজ হত্যাকাণ্ড।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, পাকিস্তানি ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করলেও, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তানের গভীরে অন্তত অর্ধ ডজন লোককে হত্যা করার জন্য গুপ্তহত্যা মিশন শুরু করে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগের পর, সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা সরকারগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। উত্তর আমেরিকায় যেসব গুপ্তহত্যা অভিযান চালানো হয়েছে, সেগুলো প্রথমে পাকিস্তানে পরীক্ষা করে ঝালিয়ে নেয়া হয়।
প্রতিবেদন মতে, পাকিস্তানে সংগঠিত গুপ্তহত্যায় সাধারণত স্থানীয় ছোট অপরাধী বা আফগান ভাড়াটেদের ব্যবহার করা হয়। এই কাজে ভারতীয় নাগরিকদের কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করতে র কর্মকর্তারা দুবাইয়ের ব্যবসায়ীদের দালাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ডগুলো প্রধানত লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মুহাম্মদ-এর সন্দেহভাজন নেতাদের লক্ষ্য করে করা হয়। গোষ্ঠী দুটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সেনা ও নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ করে আসছে নয়াদিল্লি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যাদের ভারত সন্ত্রাসবাদী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা ও বিশ্লেষকরা তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় এই অবস্থানে আপত্তি জানিয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানে পরিচালিত ভারতের অনেক কার্যক্রম আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। গোপনীয়তা বজায় রাখতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তারা কথা বলেছেন এবং নানান তথ্য প্রদান করেছেন।
পাকিস্তানি এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তদন্তের ওপর নির্ভরশীল নয়। ভারত কি শান্তিপূর্ণভাবে উঠে আসতে পারবে? আমাদের উত্তর হলো ‘না’। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।