Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

টিউলিপকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার দাবি যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোটের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০৩ পিএম

টিউলিপকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার দাবি যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোটের

যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে দুর্নীতির অভিযোগে। দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোট, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত অক্সফাম ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিককে তার মন্ত্রিত্বের দুর্নীতিবিরোধী দিক থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি জোট।

টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

এমন অবস্থায় টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। যদিও হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের ৪২ বছর বয়সী এমপি টিউলিপ দাবি করেছেন, তিনি কোনও ভুল করেননি।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, স্যার কেয়ার স্টারমার তার মন্ত্রীর প্রতি “পূর্ণ আস্থা” ধরে রেখেছেন। যদিও টিউলিপকে বরখাস্ত করতে নতুন করে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর এই চাপ তৈরি হয়েছে।

এমন অবস্থার মধ্যেই টিউলিপকে তার দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে সরে যেতে দাবি জানিয়েছে ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই জোটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফামের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোও আছে।

ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সরকারে যে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো গুরুতর ‘স্বার্থের সংঘাত’। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার খালা ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে।

মূলত আর্থিক দুর্নীতির এক মামলায় বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার খালা শেখ হাসিনা-সহ পরিবারের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের এই মন্ত্রী ব্যাপক চাপে আছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর এই জোট বলেছে, “যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং খ্যাতি রক্ষায় সরকারের পক্ষে বেশ কিছু জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ টিউলিপ সিদ্দিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণে সৃষ্ট স্বার্থ-সংঘাতে এটি এখন স্পষ্ট নয় যে— তিনি এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থানে আছেন কিনা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: “ট্রেজারি মন্ত্রী যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন, অথচ তার এমন একটি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাথে সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে যা সেই কাঠামোর অধীনে তদন্ত করা যেতে পারে।”

এর আগে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে বলেন: “তিনি নিজেকে স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে সমর্পণ করে সম্পূর্ণভাবে সঠিক কাজ করেছেন। সেই প্রক্রিয়া চলমান আছে।”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে টিউলিপ ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলছে। গত ডিসেম্বরে দুর্নীতির এই অভিযোগের তদন্তে যুক্ত হয় টিউলিপ সিদ্দিকের নাম। এরপর তদন্তের অংশ হিসাবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দেশের বড় ব্যাংকগুলোকে সিদ্দিকের সাথে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিবরণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে রয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সদস্য, এমপি এবং প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে লন্ডনের কিং’স ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের একটি ফ্ল্যাট ২০০৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিককে আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার উপহার দিয়েছিলেন বলে জানানো হয়। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। বেশ সস্তাতেই পেয়েছিলেন তিনি, কারণ একই বছর আগস্ট মাসে সেই ফ্ল্যাটটির পার্শ্ববর্তী আরেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)।

যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। এরপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন